ঢাকা | শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১

ইনোসেন্ট-রাজার সেঞ্চুরিতে দাপুটে জয় জিম্বাবুয়ের

নট আউট ডেস্ক
প্রকাশিত: ৬ আগস্ট ২০২২ ০৭:৩৩

১৯২ রানের জুটি গড়ে জিম্বাবুয়ের জয়ের নায়ক ইনোসেন্ট কাইয়া ও সিকান্দার রাজা। ছবি: টুইটার ১৯২ রানের জুটি গড়ে জিম্বাবুয়ের জয়ের নায়ক ইনোসেন্ট কাইয়া ও সিকান্দার রাজা। ছবি: টুইটার

নট আউট ডেস্কঃ সাম্প্রতিক কিংবা অতিত, পরিষ্কার ফেভারিট হিসেবেই ওয়ানডে সিরিজ খেলতে নেমেছিল বাংলাদেশ। অন্যদিকে দলের তারকা ক্রিকেটারদের ছাড়া এক অনভিজ্ঞ দল নিয়েই মাঠে নেমেছিল স্বাগতিকরা। সেই সাথে গত ১৯ ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সাথে জয় না পাওয়া জিম্বাবুয়ের, আত্নবিশ্বাস ছিল সদ্য টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়। ঠুনকো সেই আত্নবিশ্বাসকে পুঁজি করেই মাঠে নেমে স্বাগতিক জিম্বাবুয়ে এবার জয় দিয়ে শুরু করল ওয়ানডে সিরিজটাও।

হারারেতে এদিন টস হেরে ব্যাট করে চার খানা পঞ্চাশে, বাংলাদেশ গড়ে রানের পাহাড়। পাহাড়সম টার্গেট তাড়া করতে নেমে শুরুতেই দুই উইকেট খুইয়ে বিপাকেই পড়েছিল স্বাগতিকরা। এরপর কাইয়া ও মাধভেরের ব্যাটে প্রাথমিক বিপর্যয় সামাল দেয় জিম্বাবুয়ে। চর্তুথ উইকেট জুটিতে কাইয়া ও সিকান্দার রাজা মিলে দলকে রাখে লড়াইয়ে। তবে তখনও ম্যাচেই ছিল বাংলাদেশ। তবে ব্যাক্তিগত ৪৩ রানে ব্যাট করা রাজা ক্যাচ তুলেছিল কাভারে। আর সেটা লুফে নিতে ব্যর্থ হন বদলি নামা তাইজুল ইসলাম। এরপরেই বদলে যায় ম্যাচের দৃশ্যপট । 

জীবন পাওয়া রাজা এরপর টাইগার বোলারদের বানিয়েছেন পাড়ার বোলারে৷ তাতেই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেয় জিম্বাবুয়ে। তাকে যোগ্য সঙ্গ দেন কাইয়া। দুইজনেই তুলে নেন দুর্দান্ত সেঞ্চুরি। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি জিম্বাবুয়েকে। সেঞ্চুরিয়ান কাইয়া ফিরলেও, রাজার আনবিটেন ১৩৫ রানে ভর করে ১০ বল হাতে রেখেই দাপুটে জয় তুলে নেয় জিম্বাবুয়ে। এই জয়ে ১-০ ব্যবধানে সিরিজে এগিয়ে গেছে স্বাগতিকরা। 

৩০৪ রানের পাহাড়সম টার্গেট তাড়া করতে নেমে, দলীয় ৬ রানের মধ্যেই জিম্বাবুয়ে হারায় অধিনায়ক রেগিস চাকাভা ও মুসকান্দার উইকেট। শুরুতেই দুই ওপেনারকে হারিয়ে বিপাকে পড়া স্বাগতিকরা প্রতিরোধ গড়ে ইনোসেন্ট কাইয়া ও মাধভেরের ব্যাটে। তৃতীয় উইকেট জুটিতে এই দু'জন যোগ করেন ৫৬ রান। দলীয় ৬২ রানের মাথায় ভুল বুঝাবুঝিতে রান আউটে কাটা পড়েন মাধভেরে। এরপর সিকান্দার রাজাকে নিয়ে প্রতিরোধের চেষ্টা করেন কাইয়া।

চর্তুথ উইকেট এই দু'জনের ব্যাটে চড়ে দলীয় একশ পার করে জিম্বাবুয়ে। এরপর বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রান তুলতে থাকেন এই দুই জিম্বাবুয়ে ব্যাটার। গড়েন পঞ্চাশোর্ধ রানের জোট। হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন কাইয়া। অন্যদিকে শুরু থেকে দারুণ ব্যাট করা রাজা ছুটছিলেন হাফ সেঞ্চুরির পথে৷ তবে ব্যাক্তিগত ৪৩ রানের মাথায় তাসকিনের বলে ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন কাভারে। কিন্তু সেই ক্যাচ হাত ফসকায় তাইজুলের৷ তাতেই ম্যাচের মোমেন্টাম পেয়ে যায় জিম্বাবুয়ে। 

চর্তুথ উইকেটে রাজা-কাইয়ার অবিচ্ছিন্ন শতাধিক রানের জোটে লড়াইয়ে ফিরে জিম্বাবুয়ে। এরপর এক প্রান্ত আগলে কাইয়া ছুটেন সেঞ্চুরির দিকে৷ অন্যদিকে আগ্রাসী ব্যাট করে জিম্বাবুয়েকে জয়ের স্বপ্ন দেখান সিকান্দার রাজা। এরপর একাধিক ক্যাচ মিস করে টাইগার ফিল্ডাররা৷ তাতেই ম্যাচ থেকে ক্রমশ ছিটকে যায় বাংলাদেশ। ইনিংসের ৪৩তম ওভারে জোড়া সেঞ্চুরি তুলে নেন ইনোসেন্ট কাইয়া ও সিকান্দার রাজা। এদিন কাইয়ার ক্যারিয়ারের সেঞ্চুরি পাওয়ার দিনে, রাজা পেয়েছেন ওয়ানডেতে চর্তুথ সেঞ্চুরির দেখা।

এই দু'জনের সেঞ্চুরির সুবাধে জয় তখন জিম্বাবুয়ের ছিল সময়ের ব্যাপার মাত্র। তবে ব্যাক্তিগত ১১০ রানে কাইয়া ফিরলে ভাঙে, ১৯২ রানের ম্যারাথন জুটি। এরপর রাজার ব্যাটে চড়ে সহজেই লক্ষ্যে পৌঁছায় জিম্বাবুয়ে। শেষ পর্যন্ত ১০ ও ৫ উইকেট হাতে রেখে জয় পায় স্বাগতিকরা৷ ৮ চার ও ৬ ছক্কায় ১০৯ বলে আনবিটেন ১৩৫ রানের নক খেলেন সিকান্দার রাজা। 

এর আগে হারারেতে এদিন টস জিতে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে আমন্ত্রণ জানায় স্বাগতিক জিম্বাবুয়ে। ব্যাট করতে নেমে দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও লিটন দাসের ব্যাটে উড়ন্ত সূচনা পায় বাংলাদেশ। পাওয়ারপ্লে'র প্রথম দশ ওভারেই দু'জন মিলে তুলেন ৫১ রান। এরপরেই বোলারদের দারুণ প্রচেষ্টায় বাংলাদেশের রানের লাগাম টেনে ধরে জিম্বাবুয়ে। তবে উদ্বোধনী জুটিতে অবিচ্ছিন্ন শতাধিক রান তুলে বাংলাদেশের শক্ত ভিত গড়ে দেন তামিম-লিটন।

শুরুতে আগ্রাসী ব্যাট করা তামিম, ধীরেসুস্থে তুলে নেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৫৪তম হাফ সেঞ্চুরি। এরপরেই দারুণ এক মাইলফলক স্পর্শ করেন তিনি। ওয়ানডেতে ৮ হাজার রানের মাইলফলক ছুঁতে তামিমের প্রয়োজন ছিল ৫৭ রান। এদিন সেই মাইলফলক স্পর্শ করেই তামিম উঠে যান অন্য উচ্চতায়। বিশ্বের নবম ওপেনার ও সবমিলিয়ে ৩৩তম ক্রিকেটার হিসেবে ৮ হাজারি রানের ক্লাবে প্রবেশ করেন তিনি।

ব্যাক্তিগত মাইলফলক স্পর্শ করার পরই সাজঘরে ফিরেন তিনি। সিকান্দার রাজাকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে কাটা পড়েন দলীয় ১১৯ রানের মাথায়৷ ফেরার আগে ৯ চারে খেলেন ৮৮ বলে ৬২ রানের ইনিংস। তামিমের বিদায়ের পর এনামুলকে নিয়ে পঞ্চাশোর্ধ রানের জুটি গড়েন লিটন। নিজেও তুলে নেন হাফ সেঞ্চুরি। এরপরেই দ্রুত রান তুলে লিটন ছুঁটছিলেন শতকের দিকেই। তবে ব্যাক্তিগত ৮১ রানের মাথায় পেশিতে টান পড়ে এই ওপেনারের৷ ফলে স্ট্রেচারে করেই মাঠ ছাড়তে হয় তাকে৷ মাঠ ছাড়ার আগে ৯ চার ও ১ ছক্কায় ৮৯ বলে খেলেন ৮১ রানের ইনিংস। 

এরপর এনামুল-মুশফিক জুটি বাংলাদেশকে বড় সংগ্রহের দিকে নিয়ে যায়। দীর্ঘদিন পর দলে ফেরা এনামুল হতাশ করেছিলেন টেস্ট ও টি-টোয়েন্টিতে। তবে ডিপিএলে রেকর্ড হাজারের উপর রান করা এনামুল ছিল সুযোগের অপেক্ষায়৷ দীর্ঘ তিন বছর পর ওয়ানডে সেই সুযোগ পেয়েই ব্যাট হাতে দিলেন জবাবটা৷ প্রত্যাবর্তনের ম্যাচে ৪৭ বলেই তুলে নেন হাফ সেঞ্চুরি। এরপরেই জিম্বাবুয়ে বোলারদের উপর চড়াও হয়ে করেন ব্যাট৷ তবে ইনিংসের শেষ দিকে এসে উড়িয়ে মারতে গিয়েই লং অনে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন তিনি।

ফেরার আগে এনামুল খেলেন ৬ চার ও ৩ ছক্কায় ৬২ বলে ৭৩ রানের ইনিংস। এনামুলের বিদায়ের পর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে নিয়ে বাকিটা শেষ করেন মুশফিক। ছুটি কাটিয়ে ফেরা এই তারকা ব্যাটার পেয়েছেন হাফ সেঞ্চুরির ও দেখা৷ শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ৫০ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ সংগ্রহ করে ৩০৩ রান। ৫ চারে ৪৯ বলে মুশফিক অপরাজিত থাকেন ৫২ রানে৷ ৩ চারে ১২ বলে ২০ রান করেন রিয়াদ।

 

-নট আউট/টিএ



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর

প্রথম ওয়ানডেতে হোঁচট খেল বিসিবি একাদশ

ভারতের এমএ চিরাম্বরম স্টেডিয়ামে সোমবার প্রথম ওয়ানডেতে মুখোমুখি হয়েছিল তামিলনাড়ু ক্রিক...

ভারত সিরিজের দল ঘোষণা বাংলাদেশের

জিম্বাবুয়ে সফরের দল থেকে বাদ পড়েছেন মোসাদ্দেক সৈকত, শরিফুল ইসলাম ও তাইজুল ইসলাম।

জয়ের স্বপ্ন দেখিয়ে হেরে গেল বাংলাদেশ

৭৪ রানের মধ্যে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৪৫ রানের টার্গেটেই কঠিন বানিয়ে ফেলে ভারত।