03/15/2025 স্কুল ক্রিকেটে দেখা মিলল জুনিয়র সাকিবের
মশিউর রহমান শাওন
১২ জুন ২০২২ ০৫:৫৩
মশিউর রহমান শাওনঃ ২০০৬ সালের ৬ আগষ্ট, বিদেশের মাটিতে বাইশ গজের লড়াইয়ে বল হাতে এক উইকেটের পাশাপাশি ব্যাট হাতে ৩০ রান করা ১৯ বছরের তরুণ খেলোয়াড়টি বর্তমানে বাংলাদেশ ক্রিকেটে বড় আস্থার নাম। সময়ের সাথে পরিণত হয়ে নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য এক উচ্চতায়, যে উচ্চতা স্পর্শ করা অনেকের কাছে শুধুই স্বপ্ন। আবার অনেকের মাঝে অসংখ্যজনের কাছে সেই স্বপ্ন অনুপ্রেরণা। যে অনুপ্ররণায় খুঁজে পাওয়া যায় আত্মশক্তি, মিশে থাকে লড়াই করার মানসিকতা। সাদা-কালো টেলিভিশনের যুগে ব্যাট-বল নিয়ে সেদিনের সেই বামহাতি তরুণের যে যাত্রা শুরু হয়েছিল তা ঝকঝকে রঙ্গিন পর্দার যুগে স্থান পেয়েছে বিশ্বসেরাদের কাতারে। ক্রিকেটের প্রেমে যৌবন বিলিয়ে দেওয়া অথবা ক্রিকেট দেখা মানুষগুলো হয়তো বুঝে গেছে আলোচনায় এসেছে কার নাম তবুও খোলাসা করা যাক সকলের জন্যই। বলা হচ্ছে ১৯৮৭ সালে মাগুরায় জন্ম হওয়া সাকিব আল হাসানের কথা। যিনি লাল-সবুজের প্রতিনিধি হয়ে মাতিয়ে বেড়াচ্ছেন পুরো ক্রিকেট দুনিয়া।
সাকিব আল হাসানের মত হতে চায় এমন স্বপ্ন দেখে অনেকে। দেশের হয়ে বিশ্বজুড়ে করতে চায় অনন্য কিছুই। লাল-সবুজের পতাকা উড়িয়ে মুক্ত আকাশে তাকিয়ে বলতে চায় আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি। তবে তাদের মত কতজন সাকিবের অ্যাকশনে বোলিং করতে পারে। কিংবা স্পিন ঘূর্ণিতে ব্যাটারকে এলবিডব্লিউ এর ফাঁদে ফেলে আঙ্গুল দেখিয়ে সাকিবের মত আউট চাইতে পারেই বা কতজন। খুঁজলে সংখ্যাটা হতে পারে বেশি অথবা গুটি কয়েক। সেই পথে না হেঁটে আলোচনা করা যাক খুঁজে পাওয়া বিশ্বসেরা সাকিবের কার্বন কপিকে নিয়ে। প্রাইম ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতায় চলছে জাতীয় স্কুল ক্রিকেট চ্যাম্পিয়নশিপ। লক্ষ্য একটাই বের করতে হবে ভবিষ্যত তামিম-সাকিবদের। এমন পর্যায়ে দূর্দান্ত পারফরম্যান্স ও প্রতিভার শতভাগ থাকার বদৌলতে নট আউট বিডির নজড়ে এসেছে রংপুরের ইয়াসিন আরাফাত সাকিব। অ্যাকশন আবেদনের সাথে সাকিব আল হাসানের মত ইয়াসিন সাকিবের জার্সি নাম্বারও ৭৫।
শুধুমাত্র বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের অ্যাকশনে বল করতে পারায় রংপুরের সাকিবকে নিয়ে এমন আলোচনা যে নয় তা আগেই বলে রাখা উত্তম। ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর জন্ম হওয়া সাকিবের বেড়ে ওঠা রংপুর জেলার হারাগাছে। অল্প বয়স থেকেই সখ্যতা ক্রিকেটের সঙ্গে। ৯ বছর বয়সে রংপুর ক্রিকেট গার্ডেনে অনুশীলন যাত্রা শুরু করা সাকিবের বর্তমান বয়স ১৩ ছাড়িয়ে ১৪ এর কাছাকাছি। এই সময়ে পাকাপাকিভাবে আয়ত্ব করেছে বাম হাতের স্পিন। খেলেছেন বিভাগীয় অনুর্ধ্ব-১৫ ক্রিকেট দলে। স্কিল উন্নয়নে কাজ করার সুযোগ মিলেছে অনুর্ধ্ব-১৬ দলের ক্যাম্পে।
জাতীয় স্কুল ক্রিকেট চ্যাম্পিয়নশিপের এবারের আসরে সাকিব খেলছেন রংপুর শিশু নিকেতনের হয়ে। এই দলটি ইতমধ্যে যোগ্যতা অর্জন করেছে জাতীয় পর্যায়ের ফাইনাল খেলার। সেমিফাইনালে দলের জয়ে রেখেছে বড় ধরনের ভূমিকা। নিজ শহরে বিভাগীয় পর্যায়ের ফাইনালেও দেখিয়েছিল চমক। যেই চমক আকৃষ্ট করেছিল উপস্থিত অনেক সাধারণ মানুষকে। যারা প্রথমবারের মত দেখেছিল সাকিবর প্রতিভা।
২৩ মে ২০২২। বিভাগীয় পর্যায়ের ফাইনালে লালমনিরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের বিপক্ষে সাকিবের সংগ্রহশালায় যোগ হয়েছিল ৬ উইকেট। কিন্তু বিজয় আসেনি নিজ দলের।গল্পের আড্ডায় বলেছিল ভালো কিছু হবে। রানার্স-আপ হয়ে রওনা দিয়েছিল ঢাকার পথে। তবে এবার সকলে মিলে পরিচয় দিয়েছে পরিপক্কতার।দলকে তুলেছে সর্বোচ্চ পর্যায়ে। প্রাপ্তির অপেক্ষা ১৬ তারিখের।
১১ জুন ২০২২ জাতীয় পর্যায়ের সেমিফাইনালে লো-স্কোরিং ম্যাচে দলকে বিদায়ের হাত থেকে রক্ষায় নিজের কাজ করেছেন অসাধারণভাবেই। রংপুর শিশু নিকেতনের দেওয়া ১০১ রানের টার্গেটে ব্যাটিং করতে নেমে সুনামগঞ্জ সরকারি জুবিলী উচ্চবিদ্যালয় অলআউট হয়েছে মাত্র ৫৮ রানে। ইতিহাস রচনার কারিগর ছিলেন সাকিব। ১০ ওভারে ১৯ রান খরচে নিয়েছে ৫ উইকেট। রান শূণ্য ওভার ছিল ১টি। ব্যাট ১৪ রান এসেছিল সাকিবের ক্যামিও থেকে। শেষ পর্যন্ত সাকিবের দলের জয় ৪২ রানে। পেয়েছেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার।
সাকিবের প্রতিভা ও সামর্থ্যে আস্থা রাখছেন রংপুর জেলা কোচ সহ সাকিবের শুভাকাঙ্খীরা। সাকিবের স্বপ্ন একটা সময় জাতীয় দলের হয়ে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করা। তার আগে অতিক্রম করতে হবে অনেকটা পথ। সেটি অবশ্য ভালোভাবেই জানা রয়েছে এই বোলিং অলরাউন্ডারের। কঠিন পরিশ্রমে সে পথের পথিক হতে পারলে যুবদলে করতে পারে বাজিমাত। রংপুরের আরেক ছেলে আকবরের মত নেতৃত্বে না হলেও ট্রফি উঁচিয়ে ধরার কাজ অনেকটা সহজ করে দিতে পারে বল হাতে।
বাংলাদেশ ক্রিকেটে চিরপরিচিত কথার সুর বিকল্প নেই সাকিবদের। বাস্তবিক অর্থেই নেই। তবে প্রকৃতির বাস্তব নিয়মে একদিন মাঠের লড়াইকে বিদায় বলবে সাকিবরা। সেদিন যে কয়েকজন তাদের অভার পূরণে সর্বোচ্চ দেওয়ার চেষ্ঠা করবে তাদের মধ্যে একজন হতে পারে রংপুরের সাকিব। বিশ্বসেরাদের কাতারে যাবে কি না সেটির উত্তর সূদুর ভবিষ্যতেই জানা যাবে কিন্তু সঠিক পরিচর্যা করলে দেশের ক্রিকেটে ভালো কিছু দেওয়ার সক্ষমতা রাখে সাকিব তা হলফ করেই বলা যেতে পারে।
পঞ্চপান্ডবরা একদিনে তৈরী হয়নি। তাদের তৈরী করতে দারুণভাবেই কাজ করেছে সকলে। সেইভাবে কাজ করতে হবে দলে থাকা তরুণ ও উঠতি বয়সের ক্রিকেটারদের নিয়ে। তাহলেই বিকল্প বের না হলেও পূরণ হবে তাদের না থাকার অভাব।
কঠিন পথে চলার জন্য কঠোর অনুশীলনের দায়িত্ব যেমন ইয়াসিন আরাফাত সাকিবের তেমনি সম্ভাবনার সবটুকু থাকার পরেও যেন হারিয়ে না যায় সেই দায়িত্ব নিশ্চই কর্তাদের। যে ব্যাপক পরিকল্পনায় আয়োজিত স্কুল লিগ তার বাস্তবায়ন ও সফতা পরিপূর্ণ হোক সাকিবদের হাত ধরেই।
-নট আউট/এমআরএস