নট আউট ডেস্কঃ কদিন আগেই ওয়ানডে ফরম্যাটে রিতীমত উড়ন্ত পারফর্ম করছিল বাংলাদেশ। দক্ষিণ আফ্রিকা ঘুরে, উইন্ডিজ সবখানেই জয়জয়কার ছিল টাইগারদের। অথচ সেই দলটাই এবার খর্ব শক্তির জিম্বাবুয়ের কাছে মাথানত করতে বাধ্য হলো৷ প্রথম ওয়ানডেতে বাংলাদেশকে মাটিতে নামিয়ে আমার পর, দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও মাটিয়ে নামিয়ে আনল স্বাগতিকরা৷ 

সিকান্দার রাজার রাজকীয় সেঞ্চুরিতে দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও বাংলাদেশের হার ৫ উইকেটের। প্রথম ওয়ানডের মত, দ্বিতীয় ম্যাচেও দুর্দান্ত সেঞ্চুরি হাকিয়েছেন সিকান্দার রাজা। হারারেতে বাংলাদেশের দেওয়া ২৯১ রানের টার্গেট, সিকান্দার রাজা ও অধিনায়ক রেগিস চাকাভার সেঞ্চুরিতে ১৫ বল হাতে রেখেই টপকে গেলে জিম্বাবুয়ে। চাকাভা খেলেছেন ক্যারিয়ার সেরা ১০২ রানের ইনিংস, এদিনও আনবিটেন রাজার ব্যাট থেকে এসেছে ১১৭ রান। তাতেই এক ম্যাচ হাতে রেখে সিরিজ জিতে নিলো জিম্বাবুয়ে। ফলে, দীর্ঘ নয় বছর পর বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জেতার স্বাদ পেল সিকান্দার রাজারা।

বাংলাদেশের দেওয়া ২৯১ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে, প্রথম ওয়ানডের পুনরাবৃত্তিই করেছিল জিম্বাবুয়ে এদিন শুরুতেই হাসান মাহমুদের তোপের মুখে পড়ে স্বাগতিকরা। তাতেই ওপেনার কাইতানো (০) ও গেল ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান ইনোসেন্ট কাইয়ার (৭) উইকেট হারায় জিম্বাবুয়ে। এরপর মাধভেরেকে তুলে নেন মেহেদি মিরাজ। দলীয় পঞ্চাশ করার আগেই সাজঘরে ফিরেন ওপেনার মারুমানিও (২৫)।

শুরুতেই টপ অর্ডারের ধসে চাপে পড়ে জিম্বাবুয়ে। এরপর গেল ম্যাচের হিরো সিকান্দার রাজা ও অধিনায়ক রেগিস চাকাভা ধরেন দলের হাল। প্রাথমিক বিপর্যয় সামাল দিয়ে দু'জনই গড়েন অবিচ্ছিন্ন পঞ্চাশোর্ধ রানের জোট। তাতেই দলীয় একশ পার করে জিম্বাবুয়ে। এরপর এই দু'জনের দৃঢ়তায় লড়াইয়ে ফিরে তারা৷ পঞ্চাশের পর এই জুটিই গড়ে একশ রানের জোট। দু'জনই তুলে নেম হাফ সেঞ্চুরি। 

এরপর সময় যত গড়িয়েছে, ততই চড়াও হয়েছে জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক রেগিস চাকাভার ব্যাট। অবশ্য এদিনও জীবন পেয়েছেন সিকান্দার রাজা। মেহেদি মিরাজের চরম ভুলে, সহজ রান আউটের হাত থেকেই বাঁচেন এই তারকা৷ আর ভুলের মাশুল দিতেও হয়েছে বাংলাদেশ। শেষ দিকে এই দু'জন দ্রুত রান তুলে জয়টাকে করে দেন সহজ। টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরিতে, টাইগারদের বোলারদের নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরান সিকান্দার রাজা। অন্যদিকে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরির দেখা এদিন পেয়েছেন চাকাভাও।

পঞ্চম উইকেট জুটিতে এই দু'জন গড়েন রেকর্ড দুই শতাধিক রানের জোট৷ এরপর দলকে জয়ের বন্দরে রেখে সাজঘরে ফিরেন চাকাভা৷ ফেরার আগে ১০ চার ও ২ ছক্কায় খেলেন ৭৫ বলে ঝড়ো ১০২ রানের ইনিংস। শেষ দিকে মুনঙ্গাকে নিয়ে দলকে দুর্দান্ত জয় উপহার দেন রাজা৷ ৮ চার ও ৪ ছক্কায় ১২৭ বলে ১১৭ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। ২টি করে চার ও ছক্কায় ১৬ বলে আনবিটেন ৩০ করেন মুনঙ্গা। বাংলাদেশের পক্ষে দুই উইকেট নেন মিরাজ 

এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে উড়ন্ত সূচনা পায় বাংলাদেশ। এদিন শুরু থেকেই জিম্বাবুয়ে বোলারদের উপর চড়াও হয়ে রান তুলতে থাকেন টাইগার কাপ্তান তামিম ইকবাল। তাতেই পাওয়ার প্লে'র প্রথম ১০ ওভারেই বাংলাদেশ বোর্ডে জমা করে বিনা উইকেটে ৬২ রান। ৪৩ বলেই হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তামিম। চার মধ্যে নিয়েছেন চারটি সিঙ্গেল, বাকি ৪৬ রান'ই এসেছে বাউন্ডারি (১০ চার ও ১ ছক্কা) থেকে। অবশ্য হাফ সেঞ্চুরি তুলেই সাজঘরে ফিরেন তামিম।

এরপর থিতু হয়েও ইনিংস লম্বা করতে ব্যর্থ হন আরেক ওপেনার এনামুল বিজয়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে রান আউটে কাটা পড়ে এই ওপেনার ফিরেন ২৫ বলে ২০ রান করে। জোড়া ধাক্কা খেয়ে খানিকটা চাপে পড়া বাংলাদেশ প্রতিরোধ গড়ে মুশফিকুর রহিম ও নাজমুল শান্ত'র ব্যাটে চড়ে। এই দু'জনে ভর করেই দলীয় একশ পার করে বাংলাদেশ। এরপর দু'জনই পূর্ণ করেন পঞ্চাশোর্ধ রানের জোট। ২৫ রান করা মুশফিকের বিদায়ে ভাঙে এই জুটি। 

চর্তুথ উইকেটে দলের হাল ধরেন নাজমুল শান্ত ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তবে দু'জনের শম্বুকগতির ব্যাটিংয়ে, বড় সংগ্রহের আভাস দেওয়া বাংলাদেশের লাগাম টেনে ধরে জিম্বাবুয়ে। এরপর ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেলে শান্ত ফিরেন ব্যাক্তিগত ৩৮ রান করে। শান্ত'র বিদায়ের পর আফিফ নেমেই বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তুলতে থাকেন রান। তাকে সঙ্গ দেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। পঞ্চম উইকেট জুটিতে এই দু'জন যোগ করেন আরও ৮১ রান। ৪ চারে ৪১ বলে ৪১ রান করা আফিফের বিদায়ে ভাঙে এই জুটি।

শেষ দিকে একাই লড়াই করেন রিয়াদ। তুলে নেন হাফ সেঞ্চুরি। তাতেই বোর্ডে লড়াকু সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ২৯০ রান করে বাংলাদেশ। ৮৪ বলে মিরাজ অপরাজিত থাকেন ৮০ রান করে। জিম্বাবুয়ের পক্ষে সিকান্দার রাজা নেন তিনটি উইকেট। মাধভেরে নেন দুইটি উইকেট। 

-নট আউট/টিএ