03/13/2025 ভারতের চন্দ্রশেখর!
মশিউর রহমান শাওন
১৭ মে ২০২৩ ১৭:৪৪
মশিউর রহমান শাওনঃ ১৯৭১! ইংল্যান্ড সফরে ভারতীয় ক্রিকেট দল। তিন ম্যাচ টেস্ট সিরিজের প্রথম দুইটি ড্র। তৃতীয় টেস্টে ভারতের ৪ উইকেটের জয়। এই জয়ে ইংল্যান্ডের মাটিতে প্রথমবার টেস্ট ম্যাচ ও সিরিজ জয় ভারতের। ভারতের ঐতিহাসিক এমন জয়ের কারিগর ছিলেন লেগস্পিনার ভাগবত চন্দ্রশেখর। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ২ উইকেটের পর দ্বিতীয় ইনিংসে ৩৮ রান খরচ করে ঘায়েল করেন ৬ ইংলিশ ব্যাটারকে। শেখরের এমন বোলিংয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ১০১ রানেই অলআউট হয় স্বাগতিকরা। ওভালের মরা উইকেটে শেখরের এমন কীর্তি তাকে করেছে অনন্য। বল হাতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য দখলের পর ১৯৭২ সালে উইজডেন’র বর্ষসেরা ক্রিকেটার নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি।
ক্রিকেটের আরেক ‘মোড়ল’ অস্ট্রেলিয়া। ভারত-অস্ট্রেলিয়া টেস্ট লড়াই শুরু হয়েছিল ১৯৪৭ সালে। নিজেদের মাটিতে সফলতা পেলেও অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ভারতের টেস্ট জিততে সময় লেগেছে প্রায় ৩০ বছর। ১৯৭৭ সালের শেষদিকে পাঁচ ম্যাচ টেস্ট সিরিজ খেলতে অস্ট্রেলিয়া সফর করেছিল ভারত। সেই সিরিজেই প্রথমবার অজিদের মাঠে জয় পায় দলটি। এই জয়ের পেছনেও বড় ভূমিকা রেখেছেন চন্দ্রশেখর। সিরিজের তৃতীয় টেস্টের দুই ইনিংসেই ৬টি করে উইকেট নিয়েছিলেন শেখর। কাকতালীয় বিষয়, দুই ইনিংসে আবার খরচ করেছেন ৫২ রান করেই।
ভারতের মহিশূরে ১৯৪৫ সালের ১৭ মে জন্ম চন্দ্রশেখরের। ১৯ বছর বয়সেই ১৯৬৪ সালে অভিষেক হয় ভারতীয় টেস্ট দলে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অভিষেক টেস্টের প্রথম ইনিংসে ‘১’ আর দ্বিতীয় ইনিংসে শিকার করেন ৪ উইকেট। সেবছর ৬ টেস্টের ১০ ইনিংসে উইকেট নিয়েছে ১৯টি। যেখানে প্রতিপক্ষ ছিল ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া। অভিষেক বছরেই দলে নিজের জায়গা করেছেন পাকাপোক্ত। দারুণ পারফরম্যান্সের ফলে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড কর্তৃক নির্বাচিত হয়েছেন দেশটির বর্ষসেরা ক্রিকেটার। একই বছর ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা ‘পদ্মশ্রী’ ও ভারতী সরকার কর্তৃক ক্রীড়া সম্মাননা ‘অর্জুন’ পুরস্কার লাভ করেন তিনি।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ক্যারিয়ার শুরু করা চন্দ্রশেখর ১৯৭৯ সালে ক্যারিয়ারের ইতি টেনেছেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষেই। মাঝের এই সময়ে খেলেছেন ৫৮ টেস্ট। এসময় বল করার সুযোগ হয়েছে ৯৭ ইনিংসে। ২৯.৭৪ গড়ে নিয়েছেন ২৪২ উইকেট। প্রতিপক্ষ ব্যাটাররা শেখরের ১৫৯৬৩ টি বল মোকাবেলা করে করেছেন ৭১৯৯ রান। ১৯৭২ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দিল্লি টেস্টে ৭৯ রানে নেওয়া ৮ উইকেট, শেখরের সেরা বোলিং ইনিংস। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১০২ রান খরচে ১২ উইকেট শিকার ক্যারিয়ার সেরা ।
টেস্ট ক্রিকেটে প্রায় ১৬ বছর বিচরণ করলেও সুখের হয়নি ওয়ানডে স্মৃতি। ১৯৭৬ সালে অকল্যান্ডে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অভিষেক। সেই ম্যাচে ৩৬ রানে ৩ উইকেট আর ব্যাট হাতে ১১ রান করলেও পরবর্তীতে আর সুযোগ হয়নি দলে। যার ফলে সেই ম্যাচটিই ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম ও শেষ হয়ে রয়েছে এই লেগ স্পিনারের।
বল হাতে ভারতীয় দলের অন্যতম সদস্য হলেও ব্যাটিংয়ে তিনি ছিলেন প্রাণহীন। টেস্টে ব্যাটিং গড় মাত্র ৪.০৭। ১৯৭৭-৭৮ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া সফরে টানা ছয় ইনিংস থেমেছেন ০ রানেই। দুইবার অপরাজিত থাকলেও চারবারই হয়েছেন আউট। মজার বিষয়, এমন বিব্রতকর কীর্তির কারণেও পেয়েছেন পুরস্কার। চারবার শূন্য রানে আউট হওয়ার ফলে গ্যারি-নিকোলসের বিশেষ ধরনের স্মারকসূচক ব্যাট পেয়েছেন উপহার হিসেবে। টেস্টে ২৪২ শিকার করলেও চন্দ্রশেখর রান করেছেন মাত্র ১৬৭।
ক্রিকেটে সফলদের একজন চন্দ্রশেখর। তবে জীবনের শুরুর দিকেই বদলে যেতে পারত জীবন ভাগ্য। ৬ বছর বয়সেই আক্রান্ত হয়েছিলেন পোলিও রোগে। যে ডান হাত দিয়ে বোলিং মুগ্ধতা ছড়িয়ে ছিলেন দীর্ঘ একটা সময়,এই রোগে সেই হাত দুর্বল হয়ে পড়েছিল। ৪ বছর বাদেই অবশ্য তিনি সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন।
ক্রীড়াঙ্গনে সবারই একজন আইডল থাকে। চন্দ্রশেখর শৈশবেই অস্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত লেগ স্পিনার রিচি বেনো’র খেলার ধরণ রপ্ত করেছিলেন। শেখরের আইডল ক্রিকেটারকে অস্ট্রেলিয়া দলের সর্বাপেক্ষা প্রতিভাধর অধিনায়ক হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে। প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে রিচি টেস্ট ক্রিকেটে ২০০ উইকেট শিকারের পাশাপাশি স্পর্শ করেছিলেন ২ হাজার রানের মাইলফলক।
স্পিনার হলেও চন্দ্রশেখর লং রান-আপ ও হাই অ্যাকশনের বল করতেন। যার ফলে বাড়তি গতিও পেতেন এই লেগি। ক্যারিয়ারের একাংশ তিনি মিডিয়াম পেসারদের গতিতে টপ স্পিন ও গুগলি করেছেন। ১৯৭১ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ইংলিশ ব্যাটার জন এডরিখকে বোল্ড আউট করেছিলেন শেখর। বলের গতি এতটাই ছিল যে, আউট হওয়ার আগে ব্যাট নিচে নামানোর সুযোগ পায়নি ব্যাটার।
-নট আউট/এমআরএস